কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হলদে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। মাঠের দিকে তাকালে দিগন্ত জুড়ে যেন হলুদ গালিচা বিছানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে।
গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে। কম খরচে অধিক লাভ তাই সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে কৃষকরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দুধকুমার ও কালজানী নদের জেগে উঠা চরের দিকে তাকালে মনে হয় ফসলের মাঠ যেন সেজেছে গায়ে হলুদের সাজে।
মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ রাজার দেশে মৌমাছির মধু সংগ্রহের গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
সরিষা চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। সরিষা চাষে সময় লাগে কম, খরচও কম, লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা উৎপাদনের আগ্রহী হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলের কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মিটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষকরা বারী ১৪, ১৭, ১৮ ও বীনা ৮, ৯, ১১ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। পক্ষান্তরে গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিল ২ হাজার ৬৫৪ হেক্টর জমিতে। যা গতবারের চেয়ে ৬৯৬ হেক্টর বেশী।
২০২১-২২ অর্থবছরে সরিষা চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৬৫৪ হেক্টর জমিতে। প্রতি বছর সরিষা চাষ ক্রমেই বাড়ছে।
চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষি প্রনোদনার আওতায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে ১ কেজি করে ২ হাজার ৯৩৫ জন কৃষককে উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া তেল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় প্রতি উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নতুন করে ১০০ জন কৃষক সরিষা চাষের আওতায় ৫ হেক্টর করে একত্রে সরিষা চাষ করেছেন।
কৃষি সংশ্লিষ্টদের মতে নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পলি মিশ্রিত জমি সরিষা চাষের উপযোগী।
সেচ, সার ও অন্যন্য খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষে লাভ হয় বেশি। তাছাড়া সরিষার তেল সয়াবিন তেলের চেয়ে অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন।
উপজেলা কৃষিবিভাগ বলছেন উপজেলার বেশীরভাগ জমিতে কৃষকরা দুটি ফসল উৎপাদন করে থাকেন কিন্তুু সেই জমিতে সরিষা চাষ করলে ওই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন অপরদিকে পুষ্টিকর ভৌজ্য তেলের চাহিদাও মিটবে।
তাই তারা সরিষা চাষ করতে কৃষকদের বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার দিয়ে উৎসাহিত করছেন।
কৃষকরা বলছেন আমন কাটা মারাইয়ের পর ৩-৪ মাস পর্যন্ত জমি পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়।
এতে অল্প সময়ে একই জমিতে দুটি ফসলের চাষে লাভবান হওয়া যায়। জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সবমিলিয়ে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ।
সরিষার দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে ইরি বোরো চাষে খরচ করা যায় পাশাপাশি তাদের ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটানোও সম্ভব।
উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের কৃষক মোজাহার,ইয়াকুব ও মফিজউদ্দিন বলেন, আমরা দুই বিঘা করে জমিতে সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে দুই হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে। সরিষার ক্ষেতে গেলে প্রানটা ভরে যায়।
উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নের ছিটপাইকের ছড়া গ্রামের কৃষক লিটন, মফিজ, মোস্তাফিজুর, ইসমাইল ও রাইসুল বলেন, আমরা আড়াই বিঘা করে সরিষা চাষ করেছি। আশা করছি ভাল ফলন হবে। এই সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের তেল ও সার কেনার টাকা জোগাড় হয়ে যাবে।
এছাড়া বর্তমানে সয়াবিন তেলের দাম বেশী। তাই বিকল্প হিসেবে সরিষার তেল ব্যাবহার করতে পারব। তাছাড়া সয়াবিন তেলের চেয়ে সরিষার তেলের পুষ্টিগুন অনেক বেশী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন ভোজ্য তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যেহেতু তেল উৎপাদন কম হয়। তাই আমরা একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তৈলাক্ত ফসলের ৫০ ভাগ আমাদের দেশ থেকে উৎপাদন করতে চাই।
এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কৃষকদের সরিষা চাষ করতে প্রনোদনা দিচ্ছি ও কৃষকদের লাভের জন্য দু’ফসলি থেকে তিন ফসলি জমি তৈরী করতে উৎসাহিত করছি।
###//
১১-১২-২০২৩